বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস (কোভিড ১৯) সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশে চলতি বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। দীর্ঘ দিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় পড়া-লেখায় মন বসে না শিক্ষার্থীদের।
বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ঠাকুরগাঁওয়ের অনেক শিক্ষার্থী এখন টাকার অভাবে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে পাট ধোয়ার (সোনালী আঁশ) কাজ করছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে প্রচণ্ড রোদকে সঙ্গী করে পাট ধোয়ার কাজে ব্যা একদল শিশু শিক্ষার্থী।
একদিকে যেমন ডোবাও পুকুরের থই থই পানি আর অন্যদিকে প্রচণ্ড রোদ। তবুও জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করছে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থী সাকিব জানায়, স্কুল বন্ধ তাই পাট ধোয়ার কাজ করছি প্রতিদিন কাজ করে ২শ থেকে ৩শ টাকা পাই। আর এই টাকা বাবা-মাকে দিই।
একই স্কুলের ছাত্র বেলাল জানায়, তাদের মতো অনেকে রোদে পাট ধোয়ার কাজ করতেছে।
জানা যায়, গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাধারণ ছুটিতে রয়েছে। দফায় দফায় সে ছুটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে আগামী সেপ্টম্বর পর্যন্ত। কিন্তু এরপরও স্কুল খুলবে কিনা, সেই নিশ্চয়তাও নেই। তবে বন্ধের এই সময় শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সংসদ টিভির মাধ্যমে অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করছে সরকার। একই সাথে দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজও আলাদা আলাদা ভাবে অনলাইনে ক্লাস চালু করেছে।
তবে এসবের কোনো কিছুই প্রভাব ফেলছে না ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের। বরং অবসরে এ সময়টাতে শিক্ষার্থীরা অভাবের তাড়নায় টাকা রোজগারে শ্রম বিক্রি করে পাট ধোয়ার কাজ করছে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, বেশিরভাগ পরিবারে কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোথাও মনিটরিং নেই। অথচ শিক্ষার্থীদের বাইরে এরা শিশু সংবিধান কিংবা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শিশুশ্রম নিষিদ্ধ। অথচ জেলায় অনেক শিশু শিক্ষার্থী শ্রমিকের কাজে নেমেছে।
সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংসদ টিভি ছাড়াও কিশোর বাতায়ন নামে একটি ওয়েব সাইট চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
জেলা কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৯৬০ হেক্টর। পাট আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৮১২ হেক্টর। গত বছরে পাট চাষ হয়েছিল ৫ হাজার ৮৬০ হেক্টর। আর ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় পাট চাষ হয়েছে ১ হাজার ২২২ হেক্টর জমিতে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় পাট চাষ হয়েছে ১ হাজার ৬১০ হেক্টর জমিতে। রানীসংকৈল উপজেলায় পাট চাষ হয়েছে ১ হাজার ১শ হেক্টর জমিতে।
পীরগঞ্জ উপজেলায় পাট চাষ হয়েছে ১ হাজার হেক্টর জমিতে। হরিপুর উপজেলায় পাট চাষ হয়েছে ৮৮০ হেক্টর জমিতে। ঠাকুরগাঁওয়ে এবার ভিন্ন জাতের পাট চাষ হয়েছে এ অঞ্চলের কৃষকরা দেশি, তোষা, মেশতা ও উচু মাটিতে কেনাফ এইচ বি-৯৫ জাতের পাট চাষ করছে।